মোঃ আতীক রোজেন, ফেনী প্রতিনিধিঃ
ফেনীত ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনগণকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের ভয়কে জয় করতে হবে। মানবিক সমাজ তথা মানুষের অধিকার আদায়ে মানুষের কাছে যেতে হবে।’
ফেনীতে বক্তব্য রাখছেন জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আওয়ামী সরকার স্বস্তির সাথে জামাতে নামাজও আদায় করতে দেয়নি। মহান আল্লাহ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এখন সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করছেন। এখনো চলার পথ মসৃণ নয়। দ্বীন কায়েমের সম্ভাবনা যত বেশি ষড়যন্ত্র তত গভীর হবে। সামনের সময় খুব কঠিন। ইসলামী দলগুলোকে টুকরো করে ভাগ ভাগ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ইসলামপন্থীদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খেয়েছে। দ্বীন কায়েমের জন্য অন্যের সঙ্গী নয়, নিজেরা নিজেদের সঙ্গী হতে হবে। এটা দেখে অনেকের সাখরাতুল মাওত শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনগণকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের ভয়কে জয় করতে হবে। মানবিক সমাজ তথা মানুষের অধিকার আদায়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। যুবকরা যা চিন্তা করে আমরা সেটা পরিকল্পনা করি। ভুল হলে তালিকা নয়, দরদ দিয়ে সংশোধন করতে হবে। ভালো কাজের তালিকা করে এগিয়ে নিতে হবে। যুবসমাজকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে। বৈষম্যহীন, ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়-ইনসাফ, শান্তির সমাজ বিনির্মাণে যুবকদের কাছে টেনে নিতে হবে। তাদের চিন্তার সাথে অন্যদের সংঘাত চলছে। এই জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে জামায়াতের। আমরা নির্বাচনী মোর্চা নয়, দ্বীন-ঈমানদারীর প্রশ্নে ঐক্য হওয়া যাবে। আমরা কারো করুণার কাঙ্গাল নই।’
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শহরের কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলটির জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান। বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবু তাহের মোহাম্মদ মাছুম ও মুহাম্মদ শাহজাহান।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালো টাকা, পেশীশক্তির রাস্তা বন্ধ হবে। ফ্যাসিজম সৃষ্টি হবে না। পিআর পদ্ধতি হলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হবে এমন চিন্তা একটি বিশেষ দল থেকে প্রচার করা হবে। শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। ১৮ কোটি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চাই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে খারাপ লোকেরা নেতৃত্ব পেয়ে যায়। কথা লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এই আওয়াজ জোরদার করতে হবে। দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থ বড় প্রমাণ করতে হবে।’
সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে প্রতিনিধি নির্বাচনের সর্বোত্তম পন্থা। এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে দুটি বিষয় দাবি দিয়ে ফাইট চলছে। প্রেসিডেন্ট ভোট হবে গোপন ব্যালটে। এটা জামায়াতে ইসলামীর প্রথম বিজয়। পরমাণবিক বোমা তৈরি করা ছাড়া পৃথিবীতে যত কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো নির্বাচন। ফেল করা সহজ, পাস করা কঠিন। ফেল করতে চাইলে নাকে খাঁটি সরিষা দিয়ে ঘুমান। নির্বাচনের প্রথম শর্ত প্রার্থীদের ৮০ পার্সেন্ট মানুষ চিনতে-জানতে হবে। জামায়াত কখনো দুটো দলের একটা হতে পারে না। দল ব্যান করেছিল, রেজিস্ট্রেশন, প্রতীক ছিনিয়ে নিয়েছিল, সব ফিরে পেয়েছি। আওয়ামী লীগ থাকলে এই অবস্থানে যেতে আরো কুড়ি বছর লাগতো। এখন বিশ্রাম ঠিক না। ক্লান্তিকে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। আগে ৫০ জন মিটিং করলে ৩০ জন পাহারা দিতো। এখন মাঠ অনেক উর্বর। এখন বিরামহীন নির্বাচনী কাজ করতে হবে। নির্বাচনে জিতলে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা হবে পরিকল্পনাভিত্তিক।’
আবু তাহের মোহাম্মদ মাছুম বলেছেন, ‘অন্যদের তৈরি করার দায়িত্ব রুকনদের। তৃণমূল থেকে দক্ষ, যোগ্য, কর্মী এবং মানসম্পন্ন রুকনরূপে গড়ে তুলতে হবে। গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লায় রুকন বাড়াতে হবে। তাহলে ভোট ডাকাতি, কালো টাকা পাচার ঠেকতে হবে। জামায়াতের আন্দোল মানুষের মুক্তির আন্দোলন। নিজেদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। শাসক হবে না, সেবক হবেন। কথা-কাজের গরমিল পরিহার করতে হবে। চলছাতুরি, মুনাফিকি থাকবে না। জনগণ যখন আমাদের গ্রহণ করবেন তখন কেউ বিপ্লব ঠেকাতে পারবে না। ভোটের জন্য নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবো। তাহলে সমাজে এর নৈতিক প্রভাব পড়বে। চারিত্রিক মাধুর্যতা ছড়িয়ে দিতে হবে।’
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ‘আমাদের ক্লাইমেট এক্সচেঞ্জের ধারণা নাই। স্বাস্থ্য নিয়ে ভালো তথ্য নাই। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যেসব সেক্টর প্রভাবিত হয় এসব নিয়ে আমাদের সবার কাছে তথ্য থাকে না। জামায়াতে ইসলামীকে সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণের সাথে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ মেলাতে হবে। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ। ভারসাম্যহীনতা বিরাজমান রয়েছে। সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। সমানভাবে অগ্রগামী থাকতে হবে। এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ইসলামী ভাবধারা-বর্জিত এনজিওর প্রাধান্য বেশি। এক্ষেত্রে প্রতিটি জামায়াত কর্মীকে সমাজকর্মীর ভূমিকা রাখতে হবে। মাঠপর্যায়ে সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা: মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউসুফ।