মোঃ সৈকত হোসেন
নাটোর জেলা প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রামে দাদীর বিরুদ্ধে দুই বছর বয়সী নাতিকে জুসের মধ্যে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেয়ার পথে নূর ইসলাম নামের শিশুটি মারা যায়। ওইদিন বিকালে উপজেলার ইকড়ি গ্রামের শাহাদাত শাহ’র বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। শিশু নূর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজু পুর্বপাড়া গ্রামের শাকিল আহম্মেদ ও পায়েল খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান।
অভিযুক্ত দাদীর নাম সখিনা বেগম (৪৫)। তিনি সোনাবাজু পুর্বপাড়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী। এদিকে, শিশুটি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন দাদীকে ঘরের জানালার সাথে বেঁধে ব্যাপক গনপিটুনী দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বড়াইগ্রাম উপজেলার রোলভা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে পায়েল খাতুনের সাথে সোনাবাজু গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে শাকিল হোসেনের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পুত্রবধুর সাথে শ্বাশুড়ির কলহ বিবাদ চলে আসছিল। এমনকি মাঝে মাঝেই পুত্রবধুকে মারপিটও করতেন তিনি। সর্বশেষ মাস তিনেক আগে পুনরায় তাকে পিটিয়ে জখম করলে স্ত্রীকে নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে যায় শাকিল।
শুক্রবার শাকিল স্ত্রী সন্তান নিয়ে একই উপজেলার ইকড়ি গ্রামে মামা শাহাদাত শাহ’র বাড়িতে বিয়ে খেতে যান। আত্মীয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানের সুবাদে ছেলে ও ছেলের বউসহ নাতির সঙ্গে তার দেখা হয় সখিনা বেগমের।
পুত্রবধু পায়েল খাতুন জানান, শনিবার তার মামাতো দেবরের বৌভাত অনুষ্ঠান চলছিল। দুপুর ১২টার দিকে তিনি ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগে বেলা দেড়টার দিকে তার শাশুড়ি শিশুটিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জুস খাওয়ান। এরপরই তার শাশুড়ি হঠাৎ করেই বিয়ে বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে চলে যান। কিছুক্ষণ পরই তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিষক্রিয়ার কথা জানিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেয়ার পথে নাটোর শহরের কাছাকাছি একটি হাসপাতালে শিশুটি মারা যায়। সংসার ছাড়া করতে শাশুড়ি পরিকল্পিতভাবে জুসের মধ্যে বিষ মিশিয়ে তার ছেলেকে খাইয়েছে বলে পায়েল দাবি করেন।
তবে দাদী সখিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে নিজেই জুস কিনে দিয়েছে। সেই জুস আমিও খেয়েছি, নুর ইসলামসহ মেয়ের ঘরের নাতিকেও খাইয়েছি। আমাদের কিছু হয়নি, কিন্তু নূর কিভাবে মারা গেল আমি জানিনা। পারিবারিক কলহ থাকায় আমাকে ফাঁসাতে ছেলের বউ এগুলো বলছে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আপাতত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রস্তুতি চলছে। শিশুটির লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।