এ.এস আব্দুস সামাদ ঝিনাইদহ বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আমরা পরীক্ষা দিতে চাই, আমাদের বঞ্চিত করো না”, “শিক্ষা আমার অধিকার, বৃত্তি আমার অহংকার”—এমন শত শত প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ উঁচিয়ে নিজেদের ন্যায্য দাবির কথা জানান দিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সহস্রাধিক শিশু শিক্ষার্থী। বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন যেন ছিল এক নিঃশব্দ প্রতিবাদের সরব উচ্চারণ।
উপজেলার অর্ধ শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও শিশু একাডেমির শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে সড়কে দাঁড়িয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করে। শিশুদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন তাদের অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এবং বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ, কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষক প্রতিনিধিরা কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলামের হাতে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর দাবিসমূহ সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
শিক্ষক নেতারা জানান, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত এক পরিপত্রে বলা হয়—এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষায় কেবলমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্ডারগার্টেন ও শিশু একাডেমির শিক্ষার্থীরা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। এ ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন এবং সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কোটি শিক্ষার্থী, প্রায় ৮ লাখ শিক্ষক এবং লক্ষাধিক কর্মচারী কর্মরত আছেন, যাদের জীবিকা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন ঐক্য পরিষদের কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “মেধার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিভাজন নেই। মেধা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি শিশুর জন্য সমানভাবে সুযোগ থাকা উচিত মেধা যাচাইয়ের।”
তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু এবারে তাদের বাদ দিলে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরাও চরম সঙ্কটে পড়বেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান, ইকবাল হুসাইন, কেরামত আলী এবং অর্থ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন।
শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করে বিগত দিনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সকল শিশু শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। “বৈষম্য নয়, চাই মেধার ন্যায্য প্রতিদান”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা এই মানববন্ধন শুধু শিশুদের দাবি নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ন্যায্য অধিকারের প্রতিচ্ছবি।